ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

কুবিতে কোটি টাকার বিলে ৪১ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা

দৈনিক মার্তৃভূমির খবর
আপলোড সময় : ১১-০৯-২০২৪ ১১:১৮:২২ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ১১-০৯-২০২৪ ১১:১৮:২২ পূর্বাহ্ন
কুবিতে কোটি টাকার বিলে ৪১ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) স্পোর্টস গ্যালারি নির্মাণ ও উপাচার্যের বাংলো মেরামতে ভুয়া কোটি টাকার বিল বানিয়ে ৪১ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রকৃতপক্ষে সবমিলিয়ে কাজ হয় ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকার। কিন্তু সেই বিলে ৪১ লাখ টাকা বাড়িয়ে ১ কোটি ৬৮ হাজার টাকা দেখিয়ে টাকা উত্তলোনের জন্য জমা দেওয়া হয়েছিল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলোয়াড়দের জন্য নির্মিত স্পোর্টস গ্যালারি ও বাস্কেটবল গ্রাউন্ড নির্মাণের কাজ পায় ড্রিম ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি কোম্পানি। যার টেন্ডার আইডি নং-৯৩৭১৪৯। এই কাজের কার্যাদেশ মূল্য ধরা হয়েছিল ৮৪ লাখ ৯১ হাজর ২৩ টাকা।

অন্যদিকে উপাচার্যের বাংলো সংস্কারের কাজ পান ওরিয়েন্টাল নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার টেন্ডার আইডি নং-৯৫০৭১৮। এর কার্যাদেশ মূল্য ছিল ২৩ লাখ ৪ হাজার ১৬০ টাকা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের মদদে দুটি কাজ থেকেই প্রায় ৪১ শতাংশ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন কুবির প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি বলছে, প্রকৌশলী শহীদুলের চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে ৫৯ লাখ টাকার বিলে ১ কোটি টাকা উল্লেখ করে জমা দিতে হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো টাকার জন্য আবেদন করলে আবেদনের প্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বিল আসে ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭২৯ টাকা ও ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭২ টাকা। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী সবুজ বড়ুয়া ও মোহাম্মদ মফিজুল ইসলামের স্বাক্ষরিত একটি বিলের কপিতে দেখা যায়, এই বিল যথাক্রমে ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭২ টাকা ও ২৩ লাখ ৪ হাজার ১৬০ টাকা।

অর্থ দপ্তরের সূত্র জানায়, প্রকৌশল দপ্তর বিলের টাকা নিতে দুইবার বিলের কপি জমা দেয়, কিন্তু বিলের মধ্যে গড়মিল থাকার কারণে অর্থ দপ্তর বিলের কপি রিসিভ করতে অপারগতা প্রকাশ করে।

অর্থ দপ্তর সরেজমিন বিল এবং কাজের তদারকি বিষয়ে জানতে প্রকৌশল দপ্তরে চিঠি দিলে তারা উল্লিখিত বিল উপস্থাপন করে। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতন হলে তড়িঘড়ি করে করে ৯ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন পরিদর্শনের কথা (ব্যাকডেইট) উল্লেখ করে গত ৭ আগস্ট আরেকটি বিল উত্থাপন করে প্রকৌশলী অধিদপ্তর। এই বিল উত্থাপন করার আগেও দুইবার পরিবর্তন হয় বিল।

গত ১৪ জুলাই টাকা চেয়ে চিঠি দেয় প্রকৌশল দপ্তর। ইস্যু করা চিঠিতে বিল উপস্থাপন করে ৫৮ লাখ ৫ হাজার টাকা ও ১৫ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। সেই চিঠি নিয়ে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ৭ আগস্ট পুনরায় বিলের কপি দেয় প্রকৌশল দপ্তর। সেখানে বিলের পরিমাণ উল্লেখ করা হয় ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭২৯ টাকা ও ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭২ টাকা। তবে সব বিলের কপিতে ৩০ জুনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদার মোস্তাক বলেন, আমরা কাজ শেষ করেছি কিন্তু তারা টাকা দিচ্ছে না। বিলের জন্য চিঠি দিলেও নানান কারণে বিল আটকে দিচ্ছে। প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ ও মুফিজুল ইসলাম আমার ইঞ্জিনিয়ার ফয়সালের কছে টাকা দাবি করছেন।

তবে টাকার বিষয়ে ড্রিম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ম্যানেজার ফয়সাল বলেন, আমার কাছে কেউ কোনো টাকা চাইনি, মোস্তাক ভাইয়ের কাছে চাইছে কি না জানি না।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল লতিফ বলেন, মোস্তাক আমার কাছে এসে বলে ভিসি স্যার, পিডি স্যার (শহীদুল ইসলাম) মেনে নিয়েছেন। আপনার বিলে সই করতে সমস্যা কোথায়? কত টাকা লাগবে আপনার? তখন আমি বলি ৪০ লাখ টাকার কাজে ৮৪ লাখ টাকার বিল করা কাগজে আমি সই করি না। যদি তারা টাকা দিয়ে দেয় তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই।

তিনি আরও বলেন, আমি তাদের কাছে কোনো ধরনের টাকা চাইনি। বরং আমি সরেজমিন যত টাকার কাজ হয়েছে ততো টাকার রিপোর্ট করেছি। সেজন্য তারা আমার নামে অপ্রচার করছে।

প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি সব কাজ অন্য প্রকৌশলীদের ভাগ করে দিয়েছি। আমার চেয়ে তারা ভালো বলতে পারবেন।

সরকার পতনের পর কেন এত বড় বিল এত কম হয়ে গেলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওটা বিল ছিল না, ড্রাফট ছিল।

বিল তিনবার কেন পরিবর্তন হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমার জানা নাই।

এছাড়া ব্যাকডেইট দিয়ে স্বাক্ষরের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুনের কাজ জুনেই শেষ করা হয়েছে, কোনো ব্যাকডেইট না। এখানে টাকা আত্মসাতের প্রশ্নই আসে না। ভিসি স্যার আমাকে যে রকম নির্দেশনা দিয়েছেন সেই রকম করেছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ